Recents in Beach

মায়ের আর্তনাদ | বাংলা কবিতা | লেখক : দিশানী বোস | কন্ঠে : কেয়া বিশ্বাস

 

"এক_মায়ের_আর্তনাদ" 
কলমে: দিশানী বোস 
 কন্ঠে:কেয়া বিশ্বাস 
 আমার এখন একটাই পরিচয় যে আমি ভিখারি। 
আমি সকাল থেকে রাত্রি রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করি। 
আমি আবর্জনা থেকে খাবার কুড়িয়ে খেয়ে ক্ষিদে মেটাই।
 আমার বাসস্থান এখন ব্রীজের তলা। রাত্রিতে ঘুমোতে ভয় হয়, 
মনে হয় এই কোনো বড়লোকের ছেলে মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর সময় আমার শরীরটা থেঁতলে দিয়ে চলে গেল। 
তাছাড়া রাস্তার ওপর পড়ে থাকা নুড়ি পাথরগুলো পিঠে খুব বেঁধে। 
আসলে অভ্যাস নেই তো তাই। 
 এখন সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। 
তখন আমার নিজের বাড়ি ছিল।
 বউ হয়ে যেদিন প্রথম ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম সেদিন শাশুড়ি মা বলেছিলেন -
 " এটাই আজ থেকে তোমার নিজের বাড়ি। 
তোমার গোটা জীবন এই বাড়িতেই কাটবে। 
তুমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যাবে না যতক্ষণ মৃত্যু তোমার জীবন কেড়ে না নেয় "। 
মা কে সেদিন বড়ো মুখ করে কথা দিয়েছিলাম আমি। 
কিন্তু অদৃষ্টের নিষ্ঠুর পরিহাসে আজ আমি রাস্তায়।
 কুন্তলের বাবা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন রাজার হালে থাকতাম। 
পাথর বসানো ঘর, নরম গদির বিছানা, শিমুল তুলোর বালিশ, ঘরে ঠান্ডার মেশিন, প্রতিদিন ভালো ভালো রান্না, 
বাড়িতে দুটো কাজের লোক, 
আলমারি ভর্তি গয়না, ব্যাংক ভর্তি টাকা সে এক এলাহী ব্যাপার। 
কিন্তু কুন্তলের বাবা ক্যানসারে মারা যাওয়ার পর সব কিছু যেন ওলটপালট খেয়ে গেল।
 কুন্তল, আমার একমাত্র ছেলে। ওর বাবার মৃত্যুর দু মাস আগেই ওর বিয়ে হয়েছে। 
ওর বউ মিলি। 
ওদের বিয়ের প্রথম দু মাস আমার সাথে মিলি এমন ব্যবহার করতো আমি ভেবে বসেছিলাম,
 মিলি আমার বউমা নয় নিজের মেয়ে। 
কিন্তু যেই ওর বাবা মারা গেল তারপর থেকেই মিলি কেমন যেন বদলে গেল। 
সারাদিন আমাকে দিয়ে বাড়ির সমস্ত কাজ করাতো। 
বাড়ির কাজের লোকের মতো আমাকে কেবল দুবেলা দুমুঠো খেতে দিত। 
আমাকে আর বিছানাতেও শুতে দিত না। সারারাত আমাকে বারান্দায় শুইয়ে রাখতো।
 কুন্তলও কোনো প্রতিবাদ করতো না। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল আমার। 
 একদিন রাতে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম। কুন্তল কে ডাকাডাকি করতে ও মেজাজ দেখিয়ে বলল-
 " মাঝরাতে মেলা চিৎকার করছো কেন ? 
আমাদের শান্তিতে ঘুমোতে দাও তো।
 ---বাবু আমার শরীরটা খুব খারাপ করছে। 
আমাকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবি ?
 ---পাগল নাকি ? এত রাতে কোথায় নিয়ে যাবো তোমায় !
 না বকবক করে ঘুমিয়ে পড়ো।
 ---বাবু খুব কষ্ট হচ্ছে রে
 আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চল না।
 আমি নইলে মরেই যাবো। ---দূর !
 রাত্রিতেও কি একটুও শান্তি দেবেনা।
 কষ্ট হচ্ছে যখন চুপচাপ বসে থাকো। 
পারলে মরে যাও। কিন্তু আমাদের শান্তিতে ঘুমাতে দাও। 
এই বলে কুন্তল চলে গেল।
 পরদিন সকালে আমার শরীর আরও অসুস্থ হয়ে যায়।
 মিলি আমাকে ঘর মুছতে বলে। আমি বলি-
 " বউমা আমি আজ আর উঠতে পারছিনা
 তাহলে ঘর মুছবো কি করে ? 
বাবু কে বলো না আমাকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে "।
বাবু আমার কথা শুনতে পেয়ে চেঁচিয়ে বলল- "
 আমি পারবো না তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। 
শুধু খাবে আর অর্থ ধ্বংস করবে "।
 মিলি বাবুর কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলল - "
 এই পাপটাকে ঘর থেকে বিদায় করো।
 নইলে সারাটা জীবন আমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাবে "।
 সঙ্গে সঙ্গে কুন্তল আর মিলি মিলে আমাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে দিল।
 আমি কতবার ওদের হাতেপায়ে ধরলাম, আমার কোনো কথাই শুনলো না ওরা। 
আমার হাতে কোনো পয়সাকড়ি ছিল না তখন। 
তাই আমি নিজেই আস্তে আস্তে একটা দাতব্য চিকিৎসালয়ে গিয়ে চিকিৎসার করাই।
 তারপর থেকে এই রাস্তাই আমার বাসস্থান। আচ্ছা আমরা মেয়েরা প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানের জন্ম দিই। 
তারপর সন্তানকে বুকে আগলে রেখে বড়ো করে তুলি।
 আর সেই সন্তানেরাই বড়ো হয়ে বাবা-মা কে ঘর থেকে বের করে দেয়।
 এটাই কি বিধাতার নিয়ম ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ