Recents in Beach

একই সূত্রে গাঁথা

 #একই_সূত্রে_গাঁথা #পর্ব১
দেখুন জমিদার সাহেব আমাদের বয়স হয়েছে,ছোটকাল থেকে বাপ-দাদাদের দেখছি আপনেগো জমিদার হিসেবে সম্মান দিয়া আসতাছে আমরাও এর বাইরে না।
এখন আমরা আপনেরে চেয়ারম্যান বানাইছি।আপনি এর যোগ্য আপনারে নিয়া আমগো কোনো অভিযোগ নাই।তবে আজকে আর না আইসা পারলাম না চারদিকে যা শুরু হইছে বউ-বাচ্চা নিয়া শান্তিতে থাকতে পারতাছি না।আপনার পোলাগো হাতে দায়িত্ব দিছেন আর থাকতে পারমু নি গেরামে আল্লাহ জানে।
-শুনছি তো কতই তবুও আপনেগো আমরা বিশ্বাস করছিলাম, "আপনের ছোড পোলার বউডারে তো একবারে নাই কইরা দিছে"! পোলার দোষ তো মাইনসের সামনে আইতো দিলেন না।কয় না যা রটে তা কিছু হইলেও ঘটে!
দেহেন চেয়ারম্যান সাব আমরা ছা-পোষা মানুষ ঝামেলা চাই না।আপনেগো জমিজমা কইরা খাই এর লাইগা যে নিজেগো বউ-ঝিয়ের ইজ্জত বেইচা দিমু এগুলান ভাইবেন না।পোলারে সামলান আবার দো হুনলাম বড় পোলার ঘরের নাতি ও ঢাহা শহর পড়ালেহা করছে আল্লাহ জানে ওইডা আবার কিমুন জা*লে*ম হয়!
এতক্ষণ গ্রামের বিভিন্ন মানুষের অভিযোগ শুনছিলেন গ্রামের চেয়ারম্যান আমজাদ প্রধান।পূর্বপুরুষের সম্পদে প্রধানরা ছিলো জমিদার এখনও কোনো কমতি নেই কিছুতে।প্রধান ভিলায় প্রাচীরে ঘেরা প্রাসাদের মতো দুটি অট্টালিকা, পুরনো আমলের ঐতিহ্য এখনো ধারন করে রেখেছে।সামনে বড় উঠোন গাছের ছায়ায় ঘেরা পুরো বাড়ি পিছনে পুকুর বড় বাগান বাড়িও আছে।অট্টালিকা দুটির সামনে বড় কাচারি ঘর পিছনের দিকে বড় রসুইঘর।
_
থামুন আপনারা শান্ত হন চেচিয়ে কথাটি বললো আমজাদ প্রধান।জনসাধারণ এখন নিরব দর্শক তাকিয়ে আছে আমজাদ প্রধানের দিকে।তিনি বলতে শুরু করলেন দেখুন আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি আপনারা আমাকে সাহায্য না করে যদি উল্টো দোষারোপ করেন তো আমার কাজ আরোও কঠিন হয়ে পড়বে।আপনারা প্রমানসহ আমার ছেলের বিরুদ্ধে কথা বললে আমি তার শা*স্তির ব্যবস্থা করবো।
কে বা কারা আমার পরিবারের নামে বদনাম ছড়াচ্ছে তা নিয়ে কথা বলতে চাই না সবাই কম বেশি জানে।শত্রুর কাজ পিছনে লাগা তবে আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখুন গ্রামে আর কেউ অ*নৈতি*ক কাজ করার সাহস পাবে না আমি রাত-দিন পাহারার ব্যবস্থা করবো।মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে বাহিরেও বের হতে পারবে কোনো সমস্যা হবে না।আপনারা এবার বাড়ি ফিরুন বলেই আমজাদ প্রধান অন্দরমহলে চলে গেলেন।গ্রামের মানুষ কিছুটা স্বস্তি নিয়ে বাড়ির দিকে চললো।
__________
-হ্যালো অনিলা
- জ্বি স্যার।
-তোমাকে এখনই একবার হ্যাড অফিসে আসতে হবে।
-ওকে স্যার।
ফোন রাখার মুহূর্তে আকিব আবার বললো আজ থেকে আমি তোমার স্যার নই শুধুই সহকর্মী।
অনিলা স্বাভাবিক কন্ঠেই জবাব দিলো স্যার আমরা তো সহকর্মীই ছিলাম।আকিব বললো আসো বুঝতে পারবা।বলেই কল কেটে দিলো।
অনিলা মোবাইলটা রেখে বিরক্তির সাথে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই নিজে বলে ছুটির দিনেও শান্তি নেই বাবা শুধু কাজ আর কাজ!
রুমের দরজা থেকে হাসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। অনিলা তাকাতেই দেখে তার মা মিলিনা জাহান হাসছে তার দিকে তাকিয়ে।
অনিলা চোখ রাঙিয়ে তার দিকে তাকায়।
তার মা হাসি থামিয়ে বলে তো মিস অনিলা জাহান অন্তু ক্রা*ইম ব্রাঞ্চের ইন্টেলিজেন্ট অফিসার হওয়ার সময় মনে ছিলো না যে দেশের জন্য আপনি যেকোনো সময় জীবন হাতে নিয়ে হাজির।
মামনি তাই বলে আজকের দিনেও দেখো না দুইমাস পর আজকে একটা ছুটি ছিলো।তোমার সাথে তো ঠিক মতো কথাই বলতে পারি না কিছু সময়ের জন্য।
-আমি কিছু মনে করি না সোনা তুই আমার গর্ব। মা হিসেবে আমার আর কিছু চাই না।
অনিলা তার মাকে জড়িয়ে ধরে।মিলিনা জাহান মেয়েকে তৈরি হতে বলে বাহির যাওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই পিছন থেকে অনিলা ডেকে বলে,বাবা থাকলে আমাকে নিয়ে অনেক গর্ব করতেন তাই না মা।কথাটা শুনেই মিলিনা জাহানের মুখটা চুপসে যায়।তিনি থমথমে গলায় বলেন কাজে যা অনিলা কে আছে কে নেই এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই।
মনে রাখবি আমি সবসময় তোর পাশে ছিলাম আমৃত্যু থাকবো বলেই চলে গেলেন।
অনিলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তৈরি হতে গেলো বয়স চব্বিশ শেষের পথে এখনও বাবা নামক জিনিসটার সাথে তার পরিচয় হয়নি। মা বলছে বাবা জন্মের পূর্বে মা*রা গেছেন।জন্মের পর থেকেই মায়ের সাথেই তার বেড়ে উঠা দুঃখ-কষ্ট,হাসি-কান্না মিলিয়ে তাদের মা-মেয়ের ছোট সংসার। কোনো অভাব দেখতে হয়নি জীবনে মায়ের ভালো চাকরি এখনো আছে। এখন সে নিজেও জব করছে সব মিলিয়ে সুখের সংসার।
তার বুদ্ধিমত্তা আর সাহসীকতার জন্যই সিআইডিতে বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে।
অফিসে পৌঁছেই আইজি স্যারের রুমে চলে গেলো দরজায় নক করে বললো আসবো স্যার।
-হ্যা এসো অনিলা।
-স্যার আমাকে ডেকেছিলেন কোনো সমস্যা হয়েছে?
-হুম তবে তার আগে এই খামটা খুলে দেখো।
-অনিলা খামটা খুলে স্যারের দিকে তাকায় খুশিতে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।আইজি মাহবুবুর রহমান অনিলাকে নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করেন।মেয়েটার কর্মের প্রতি টান দায়িত্ববোধ তাকে মুগ্ধ করে।অনিলা দাঁড়িয়ে স্যালুট জানায়।
মাহবুবুর রহমান বলেন তোমাকে একটা বিশেষ কাজ দেওয়ার আছে অনিলা আসা করছি এবারও সফল হবে।তোমাকে সাহায্য করার জন্য আরো দু-তিন জন সময় হলেই পৌঁছে যাবে।
-কি কাজ স্যার?
-অলিন্দভাটা গ্রামের একজন ব্যক্তি হাইকোর্টে শুধু মামলা করেই যাচ্ছে এই কেইসটা বন্ধ হয়েছে ২৩/২৪ বছর পূর্বে।যে ভদ্রলোক মামলা করেছেন তার ধারনা তার মেয়েকে তার মেয়ের জামাই খু*ন করে গু*ম করে দিয়েছে।লা*শ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।মেয়েটির স্বামীর বাড়ি একই গ্রামের জমিদারের ছেলের সাথে হয়েছিলো।এখনও সম্পদের কমতি নেই।ভদ্রলোক নিজেও জমিদার হিসেবে পরিচিত।দুইজনের বন্ধুত্ব থেকেই সন্তানদের বিয়ে দিয়ে সম্পর্ক মজবুত করছিলেন।মেয়েটার শশুর বর্তমান চেয়ারম্যান কিন্তু গ্রামের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না।এখন তোমাকে অলিন্দভাটা গ্রামে গিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে থাকতে হবে, তথ্য বের করে আসল রহস্য বের করতে হবে।
-স্যার সব ঠিক আছে কিন্তু গ্রামের মানুষ একজন আগন্তুক কে বাড়িতে জায়গা দিবে কেনো?
-অনিলা তুমি বুদ্ধিমতি।যাও সব ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।
-ওকে স্যার।
রুম থেকে বের হতেই আকিবের সাথে দেখা।আকিব অনিলাকে অভিনন্দন জানায়।
-আপনি আগে থেকেই জানতেন আকিব?
-হুম!
-স্যার এখন বাসায় যাবো।
-আমি কিন্তু আজ থেকে তোমার স্যার নই একই পদে কর্মরত।
-অনিলা সামান্য হেসে বললো এতোদিনের অভ্যাস তো তাই।
-সমস্যা নেই অনিলা।বাসায় চলে যাচ্ছো যে স্যার কি শুধু প্রোমোশন লেটার দিতেই ডেকেছিলো নাকি অন্য কোনো কাজও ছিলো?
-আপাতত গ্রামে যেতে হবে পরবর্তীতে স্যার জানাবেন, আপনি স্যারের কাছে জেনে নিয়েন।
শহরের কোলাহল যানজটেই অনিলার জীবন নিবদ্ধ। কখনো গ্রামে যাওয়া হয়নি! দাদা, নানার বাড়ি কোনো আত্মীয় সম্পর্কে ধারনা নেই তার।ছোট থেকেই আত্নকেন্দ্রীক সে বন্ধুবান্ধব নেই বললেই চলে।ঘুরতে যাওয়া তাও মায়ের সাথে।মা ছাড়া সবকিছুই তার অপরিচিত ।
সন্ধ্যা পর্যন্ত জেমে আটকে ছিলো মিলিনা জাহান।অনিলা নিশ্চিত বাড়ি পৌঁছে গেছে,মেয়েটাকে বলেও আসেনি তিনি, বাসায় যেতে আরো আধা ঘণ্টা লাগবে।
ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করলো মেয়েকে ফোন দেওয়ার জন্য। তখনই ফোনটা বেজে উঠলো।আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।মিলিনা জাহান কিছু সময় ভেবে কল রিসিভ করলো কানে ধরতেই ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো।
-কে বলছেন.....হ্যালো!
-অস্থির হচ্ছো কেনো লিনা আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী! একটা খবর দিতে ফোন দিলাম।
-কি খবর?
-তোমার মেয়ে আছে শুনলাম!
-আমার মেয়ে আছে তাতে আপনার কি যেই হোন আমার মেয়ের কিছু হলে কাউকে ছাড়বো না আমি!
-আরে শান্ত হও লিনা তোমার মেয়েকে অনেক তো আড়াল করে রাখলে।আর কতদিন লুকিয়ে রাখতে পারবে।সে যদি একবার চিনে ফেলে তো একদম উপরে পৌছে দিবে বলেই লোকটি অট্টহাসি হাসতে লাগলো।
-মিলিনা ভয়ে ভরা কন্ঠে বললো কে আপনি?আমরা আপনার কি ক্ষতি করেছি।
-তুমি নও তোমার মেয়ে সাথে একটি ছেলেও আছে দুটোকেই রাস্তা থেকে সরাতে হবে!
-আমার মেয়ে কি ক্ষতি করেছে আপনাদের?
-"জন্ম নেয়াটাই ভুল ওর"! তবে যাই হোক বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে আজ যে কেইসটা হাতে নিয়েছে তার থেকে সরে যেতো বলো, না হয় ভালো হবে না। আমার কথা মেয়েকে বলার মতো ভুল করো না লিনা।
-মিলিনা জাহানের ভয়ে হাত কাপছে, মেয়ে ছাড়া তার পৃথিবী শূন্য মেয়ের কিছুই হতে দিবেন না তিনি।অস্বাভাবিক ভাবেই তার শরীর ঘামছে রিকশা চালকেে কথায় তিনি মাথা তুলে দেখেন গন্তব্যে চলে এসেছেন ভাড়া মিটেয়ে বাসায় প্রবেশ করলো, তার ধারনাই ঠিক অনিলা বাসায় চলে এসেছে।দরজা খুলে দিয়েই প্রশ্ন করলো মা তুমি কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?
-একটা কাজ ছিলো অনিলা বলেই রুমে প্রবেশ করলেন।
-তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো গল্প করি আর একটা জিনিসও দেখানোর আছে।অনিলা ড্রয়িং রুমে বসে আছে মিলিনা জাহান এসে পাশে বসলেন।মুখটা কেমন শুকনো লাগছে।অনিলা বললো কিছু কি হয়েছে মা তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো।তিনি মাথা নাড়লেন। অনিলা হাসিমুখে প্রোমোশন লেটারটা মায়ের হাতে দিলো।
তিনি খুশি হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন অনেক বড় হ সকল কাজে জয়ী হয়ে দেশের উন্নতি কর।
-মা একটা বড় কাজ পেয়েছি।আজ স্যার অনেক আসা নিয়ে কাজটা আমাকে দিয়েছে তুমি দোয়া করো যাতে সফল হই।
-কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিলিনা বললেন কাজটা তোর না করলে হয় না।
-অনিলা অবাক হয়ে বলে মা এটা তুমি কি বলছো!
মা এটা কি বিষয়ক কাজ তা বলতে পারবো না তবে দুদিন পর গ্রামে যেতে হবে কতদিন থাকবো জানি না। এই কাজটি আমাকে করতেই হবে মা কোনো এক বাবার মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা।তুমিই তো বলতে ভয় পেয়ে কোন কাজ যেনো ছেড়ে না দেই।
-মিলিনা জাহান চুপ করে রইলেন
-কি হইছে মা তুমি না বললে জানবো কি করে।
-তোর জীবন সংকট হতে পারে, তুই ছাড়া আমার কেউ নেই তুই এই কেইস ছেড়ে দিবি আর কোনো কথা নেই।
-কিন্তু মা!!
মিলিনা জাহান উঠে চলে গেলেন।
পরেরদিন সকালে প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুছিয়ে নিয়েছে অনিলা।
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভাঙলো মিলিনা জাহানের স্ক্রিনে তাকাতেই কালকের সেই নম্বরটি ভেসে উঠলো। কল রিসিভ করতেই ওপার থেকে বললো গুড জব লিনা মেয়েকে কেইস থেকে সরিয়ে ভালোই করেছো।
মিলিনা কিছু বলবে দেখে ফোন কেটে গেছে।তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লেন।রুম থেকে বেরিয়ে মেয়ের রুমে প্রবেশ করেছেন।ব্যাগ গুছানো দেখে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন কেইস ছেড়ে দিয়েছিস তো ব্যাগ গুছিয়েছিস কেনো?
- আমি কেইস ছেড়েছি তুমি জানলে কি করে!মিলিনা জাহান শুকনো ঢোক গিললেন।মা তুমি বলেছো আমি কেইস ছাড়বো না তা কি করে হয়।এখন আমরা কয়েকজন অফিসার মিলে গ্রামে একটা ট্রেনিং এ যাচ্ছি বিশ্বাস না হলে আইজি স্যারকে কল করে জেনে নাও
-তার আর দরকার নেই।কবে ফিরবি?
-জানি না।তারিখ নির্দিষ্ট নয়।তবে সময় মতো তোমাকে কল দিবো।নয়টায় বাস ছাড়বে।
-কোথায় যাবি বলবি তো?
-সিক্রেট!
-মায়ের কাছেও বলা যাবে না!
-মা এটা অফিসিয়াল ব্যাপার জেদ করো না।
-মিলিনা অভিমানি সুরে বললো থাক বলা লাগবে না
-অনিলা মায়ের গলা জড়িয়ে বললো আমার প্রিয় মা কি রাগ করেছে? বললে কি তুমি খুশি হবে?
-হুম!-অলিন্দভাটা গ্রাম।
-কিিি!!!
-এতো অবাক হচ্ছো কেনো?
-সাবধানে মা গ্রামের মানুষ অতিরিক্ত কুসং*স্কারে বিশ্বাস করে এরা যেমন সহজ-সরল তেমনই ভয়ংকর রুপ ধারন করে।
-চিন্তা করো না মা।আমাকে এখন যেতে হবে।আচ্ছা সাবধানে যাবি।আচ্ছা।
হ্যালো অনিলা তুমি কি রওনা দিয়েছো?
-হ্যা স্যার।আমি বাসে বসলাম মাত্ররো।
-অল দ্যা বেস্ট।
-রিকুয়েষ্ট রাখার জন্য ধন্যবাদ স্যার আমি নিশ্চিত এখন যে কেইসটায় ঝামেলা আছে।মাকে কেউ থ্রে*ট দিয়েছে।মাকে একটু দেখে রাখার ব্যাবস্থা করে দিয়েন স্যার।
-চিন্তা করো না তোমার মায়ের নিরাপত্তায় লোক রাখা হয়েছে।
-ধন্যবাদ স্যার।
-------------------------
গ্রামে যা অবস্থা হচ্ছে শিমুল মানুষ গুলোও বিপদে পড়ে যাচ্ছে শাকিলটা তো ঘর বন্দী করে রেখেছে নিজেকে আরেকজন বেঁচে আছে না মরেছে জানি না।কোন দিক সামলাবো আমি। তোর ছেলেকে বল না বাড়ি ফিরে আসতে আর কতদিন দূরে থাকবে সব কিছু ওরে বুঝিয়ে আমি এবার শান্তি চাই।
-বাবা তোমার নাতি কথা শুনতে চায় না। আমি কি করবো।
-বুঝা ওরে একবার না হলে দশবার বুঝা তবুও রাজি করা আমি কিছু শুনতে চাই না।
_______
এই মেয়ে দুটো সিটই কি তোমার নাকি এভাবে বসেছো কেনো থমথমে গলায় কথাটি বললো বৃদ্ধ লোকটি।অনিলা সেদিকে তাকিয়ে বললো দুঃখীত আমি খেয়াল করিনি।
-খেয়াল থাকবে কেনো আজকালকার ছেলে-মেয়েদের তো সব ধ্যান জ্ঞান শুধু মোবাইল ফোনে।
অনিলা চুপচাপ বসে আছে।বাস ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।বৃদ্ধ লোকটি অনিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো যাচ্ছো কোথায়?
-অনিচ্ছা স্বত্বেও অনিলা জবাব দিলো অলিন্দভাটা গ্রাম।
-সেখানো তো আগে কখনো দেখিনি কার বাড়ি যাচ্ছো?
-প্রধান বাড়ি যাচ্ছি।
-প্রধানরা কেমন আত্মীয় তোমার?
-আত্মীয় নয় আমার বাবার বন্ধু শিমুল প্রধান বাবা দেশের বাহিরে যাবে তাই ওখানে পাঠিয়েছেন কিছুদিন থাকবো।
-শেয়ালের কাছে মুরগি রাখলো তোমার বাপ!
-মানে?
-কোনো কিছু না জেনেই চলে যাচ্ছো ইজ্জত নিয়ে থাকতে পারবে তো! যাই হোক নাম কি তোমার?
-অনিলা জাহান অন্তু।
-অন্তু ডাকলে কি কোনো সমস্যা আছে।
-না যা ইচ্ছে ডাকেন। আপনার নাম কি? কোথায় যাচ্ছেন?
-আমার নাম সৈয়দ আলি আজগর।আমিও অলিন্দভাটা যাচ্ছি।
অনিলার স্যারের বলা নাম মনে পড়লো সৈয়দ আলি নামক কেউ মেয়ের হয়ে কেইস করেছে।অনিলা জিজ্ঞেস করই ফেললো প্রধানদের আপনি সহ্য করতে পারেন না কেনো?
-সৈয়দ আলি চোখ মুখ শক্ত করে জবাব দেয় তোমার মেয়ের খুনিদের তুমি বুঝি দাওয়াত করে বাসায় নিয়ে খাওয়াবে।
-প্রধানদের বাড়ি যাচ্ছে যাও ওদের দোষ আছে না গুন নিজেই বুঝতে পারবে।
-আচ্ছা আপনি রাগ করবেন না।আপনার পরিবারে কে কে আছে?
-মেয়েরা ছাড়া সবাই।ওই গ্রামে তো থাকবে ইচ্ছে হলে এই অধমের বাড়ি ঘুরে এসো।
-অবশ্যই যাবো।
দুজনের ভিতর অনেক কথা হলো লোকটি অনেক ভালো মনের মানুষ অনিলার সাথে কথা হয়েছে কয়েক ঘন্টা মাত্ররো দেখে মনে হয় কত বছরের চেনা-জানা। দীর্ঘ সময় পর বাস থামলো।অনিলা নেমে চারপাশ দেখছে।আধুনিকতার ছোঁয়া এখনো লাগেনি এখানে।দুইপাশে বড়বড় গাছের মধ্যে দিয়ে ইট-সিমেন্টের পাকা রাস্তা। কিছু মাটির রাস্তা ঢালু হয়ে নিচে সারি সারি ফসলের জমি।খাল-বিলের ও দেখা মিলেছে কিছুটা দূরত্বে।এখন প্রায় বিকেল মানুষজন হাতের কাজ শেষ করায় ব্যাস্ত বাবা-মায়ের আশেপাশে ছোট ছেলে-মেয়েরা খেলা করছে অনিলা মুগ্ধ নয়নে তা দেখছে।ইট সিমেন্টের রাস্তা কাপিয়ে এগিয়ে আসছে একটি প্রাইভেট কার।সৈয়দ আলির সামনে গাড়িটি থামলো। তিনি গাড়িতে উঠার মূহুর্তে আবার বের হয়ে অনিলার সামনে এসে তাকে জিজ্ঞেস করে তোমাকে নেওয়ার জন্য কি কেউ আসবে?না হয় আমার সাথে এসো রাস্তায়ই প্রধান ভিলা পড়বে তোমায় নামিয়ে দিয়ে যাবো।অনিলা ভাবলো দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।পিছনের সিটে বসলো মিনিট পনেরো পরে গাড়ি থামলো।অনিলার ট্রলি ব্যাগটি নামিয়ে দিলো ড্রাইবার।অনিলা সৈয়দ আলিকে ধন্যবাদ জানায় তিনি বিনিময়ে হেসে গাড়ি চালাতে বলেন।
অনিলা দাড়িয়ে আছে বিশাল প্রাচীর ঘেরা বাড়ির সামনে।গেইটের পাশে দেয়ালে কিছু একটা ঝুলে আছে দেখে মনে হচ্ছে নেইম প্লেট।অনিলা সেদিকে এগিয়ে গেলো ওটা ঠিক করে রাখলো। মরিচা পড়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ পুরনো।বড় বড় অক্ষরে লিখা প্রধান ভিলা।অনিলা চারদিক চোখ বুলিয়ে গেইটের কাছে আসে গেইটেও মরিচা পড়েছে।নিস্তব্ধ গা ছমছমে পরিবেশ। অনিলা মনে মনে বলে এখানে কেইস সলভ করতে না এসে হরর মুভির সুট করতে আসলে বেশি হিট হতো!আনমনে হাসে সে।গেইট ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে বিশাল বাড়িটির চারদিক ফাঁকা সে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় একটি ভবনের দিকে।সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে ভিতর থেকে এক বৃদ্ধা মহিলা বের হয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে কি চাই এখানে?
চলবে...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ